ঢাকা, ২১ মে ২০২৫: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে কমিশন পুনর্গঠন এবং অবিলম্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে আজ বুধবার রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন এনসিপির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী।
সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশনের আচরণ নিরপেক্ষ নয়, বরং তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে। এ কারণে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনা হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী জুনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা উত্তরের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু রাজনৈতিক দল টেন্ডার না পেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। সরকারের উচিত বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করা। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের কল্যাণে কাজ করা, কোনো নির্দিষ্ট দলকে খুশি করা নয়।”
মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই। তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার কারণেই আমরা মাঠে নামছি। এ কমিশন পুনর্গঠন জরুরি।”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপসগং মামলায় নির্বাচন কমিশনের অদ্ভুত নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কমিশন মামলায় পক্ষ হয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, বরং উচ্চ আদালতে আপিল না করে মামলার বাদীপক্ষকে সুবিধা দিয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ নির্বাচন থেকেই বর্তমান রাজনৈতিক জটিলতার সূত্রপাত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এর জন্য দায়ী। এ মামলায় রায় ঘোষণার আগেই ১৯ আগস্ট সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়, যা আইন ও প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। এছাড়া, রায় ঘোষণার পর গেজেট প্রকাশের বিষয়েও নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়েই রাতারাতি সিদ্ধান্ত নেয়, যা কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”
লিখিত বক্তব্যে আখতার হোসেন আরও বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’-এর মাধ্যমে। এ আইনকে সেই সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে কমিশনের কার্যক্রমে কোনো সংস্কারের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবকেও এই কমিশন নাকচ করেছে।”
দলটির নেতারা জানান, কমিশন পুনর্গঠন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আজ সকাল থেকেই ইসি ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে এনসিপি।